আবু গারিব কারাগারের নির্যাতনের গল্প

 





এটি ইরাকের আবু গারিব কারাগারে এক নির্যাতিত বোন ফাতিমা জীবনের গল্প যিনি ইরাকের যুদ্ধকালিন সময়ে মার্কিন সেনাদের দ্বারা গণধর্ষিত হয়ে ইরাকি যুদ্ধাদের নিকট আবেগগণ চিঠি লিখেছিলেন, সম্মানিত লেখক সেই আবু গu রিব কারাগারের নির্যাতন এর ঘটনা তাঁর লেখনিতে তুলে এনেছেন। পড়ুন ইরাকের আবু গারিব কারাগারের নির্যাতনের কাহিনি..

এক নির্যাতিতা বোনের করুণ ফরিয়াদ (আবু গারিব কারাগারের নির্যাতনের গল্প)

এক জানবাজ ইরাকী যোদ্ধা। তার একমাত্র বোন ফাতিমা। বোনটির বয়স সতের কি আঠার হবে। একদিন মার্কিন সৈন্যরা ওই ইরাকী জানবাদ মুজাহিদকে পাকড়াও করার জন্য তার বাড়ি ঘেরাও করে। তল্লাশী চালায় ঘরের প্রতিটি কক্ষে। সকল গোপন স্থানে। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। অনেক চেষ্টা করেও জানতে পারেনি সে কোথায় আছে । ভাইকে না পেয়ে হিংস্র হায়েনাগুলো অবশেষে যুবতী বোনটিকেই ধরে নিয়ে যায় । তারপর তার উপর চালায় পাশবিক নির্যাতন ।

ফাতেমাকে ইরাকের আবু গারিব কারাগারে রাখা হয়। সেখানেই তার জন্য রচিত হয় জীবনের কলঙ্কিত অধ্যায়। চালানো হয় নিষ্ঠুর নিপীড়ন । শুধু ফাতেমাই নয় তার মতো আরোও বেশকিছু যুবতীকে একই পাশবিকতার সম্মুখীন হতে হয় ।

নির্যাতিতা ফাতেমা বহুকষ্টে একটি চিঠি লিখে। তারপর উহা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে পাঠাতে সক্ষম হয় ইরাকী যোদ্ধাদের কাছে। ফাতেমার চিঠি পেয়ে ইরাকী যুদ্ধারা দুঃসাহসী হামলা চালায় আবুগারিব কারাগারে। যার উদ্দেশ্য ছিল ফাতেমাসহ অন্যান্য বন্দী ইরাকীদের উদ্ধার করা । ফাতেমা তার চিঠিতে লিখেছে-

মহান করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি । বলুন, তিনি আল্লাহ এক আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয় নি। এবং তার সমকক্ষ আর কেউ নেই। (সূরা ইখলাছ)

প্রিয় ইরাকী মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা। চিঠির শুরুতেই আমি সূরা ইখলাসের উদ্ধৃতি দিলাম। কারণ, এই সূরায় মহান আল্লাহর পরিচয় অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত অথচ সার্থকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আমার বিশ্বাস প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ে এই সূরাটি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে গেঁথে আছে ।

হে আল্লাহর পথে লড়াইকারী প্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা! আপনাদের কাছে বলার মতো কিছুই নেই আমার। আছে শুধু চোখের তপ্ত অশ্রু, হৃদয়ের করুণ আর্তনাদ ও কিছু অব্যক্ত বেদনা। যে বেদনা কেবল অনুভব করা যায়, ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। প্রিয় ভাইয়েরা আমার, জীবনের এক কঠিন সন্ধিক্ষণে আপনাদের কাছে চিঠি লিখছি। যে চিঠি কলমের কালি দিয়ে লেখা মনে হলেও মূলতঃ তা হৃদয় থেকে ক্ষরিত রক্ত দিয়েই লেখা ।

সম্মানিত মুজাহিদ যোদ্ধারা! আমি এক অসহায় নারী। মার্কিন নরপিশাচরা আমার জীবনের সমস্ত স্বপ্ন সাধ ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। শুধু আমি নই, আমার মতো অসংখ্য যুবতীকে বরণ করতে হচ্ছে একই পরিণতি । মানবরূপী এ হায়েনাগুলো প্রতিদিন আমাদের উপর যে নির্মম ও পাশবিক আচরণ করছে তা প্রকাশ করার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। শুধু এতটুকু বলি, আমরা আজ হিংস্র হায়েনাদের সন্তান পেটে ধারণ করে ঘুরে বেড়াচ্ছি । প্রিয় ভাইয়েরা! আমি আপনাদের সহোদর বোন না হলেও ধর্মীয় সম্পর্কের বোন। এ কারাগারে বন্দী হওয়ার পর আমার এমনও দিন গিয়েছে যেদিন আমাকে পাষণ্ডদের হাতে একবার দুইবার নয়, নয় বার সম্ভ্রম বিসর্জন দিতে হয়েছে। এতে একটি দুর্বল নারীর অবস্থা কি দাঁড়াতে পারে তা কি আপনারা ধারণা করতে পারেন? আচ্ছা কল্পনা করুন তো, আপনার আপন বোনকে যদি এভাবে শ্লীলতাহানির শিকার হতে হতো, তবে কেমন লাগতো আপনার। আমার মতো তেরটি মেয়ে রয়েছে কারাগারের এই প্রকোষ্ঠে। সকলেই অবিবাহিতা। শয়তানরূপী মার্কিন পশুরা আমাদের সম্ভ্রমহানী করেই ক্ষান্ত হয় নি, তারা আমাদের দেহ থেকে যাবতীয় পোষাক কেড়ে নিয়েছে। শত অনুনয় বিনয় করেও তাদের কাছ থেকে পোষাকগুলো ফেরত পাই নি। ভাইয়েরা! একটু চিন্তা করে দেখুন তো! কতিপয় যুবতী নারী যদি পুরুষদের সামনে বস্ত্রহীন অবস্থায় থাকে তবে তাদের মানসিক অবস্থাটা কেমন হতে পারে? মানুষ নামের কলঙ্ক মার্কিন সৈন্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে সকলের সামনেই আমাদের ইজ্জত কেড়ে নেয়। এই হচ্ছে আমাদের এখনকার দিনলিপি ।


প্রিয় ভাইগণ! আমাদের একটি মেয়ে নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। সম্ভ্রম হানির পর এক মার্কিন সৈন্য তার বুক ও উরুতে প্রচণ্ড আঘাত করে। তারপর তার উপর চালায় এমন পাশবিক নির্যাতন যা ভাবতে গেলেও গা শিউরে উঠে। শেষ পর্যন্ত মেয়েটি দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে আত্মহত্যা করে। আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। মহান আল্লাহপাকও তাকে ক্ষমা করবেন বলে আশা রাখি । কারণ তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু ।

প্রিয় ভাইয়েরা! যে ভয়াবহ নিষ্ঠুর নিপীড়নের কথা, যে অপমান আর লাঞ্ছনার কথা, যে যন্ত্রণা আর বেদনার কথা কোনোদিন ভাবতে পারি নি আমরা, সেই নিপীড়ন ও লাঞ্ছনা সেই অপমান ও যন্ত্রণা অহরহ ভোগ করতে হচ্ছে আমাদেরকে। কারাগারে প্রতিদিনই আমাদের উপর নির্মম আচরণ করা হয়। মার্কিন সৈন্য নামধারী হায়েনাগুলোর নিষ্ঠুর নিষ্পেষণ আর বর্বোরোচিত আক্রমণে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত আমরা লাঞ্ছিত হচ্ছি। পশুগুলো আমাদের কামরায় প্রবেশ করেই ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের উপর। ছিঁড়ে ফেঁড়ে খেতে চায় আমাদের। ভোগ করতে চায় ইচ্ছে মতো। তারা চায় তাদের আঙ্গুলের ইশারায় উঠাবসা করি। আনন্দে মাতিয়ে রাখি তাদের অপবিত্র অন্তরগুলোকে। পশুগুলোর অত্যাচার থেকে একটি রাতও আমরা রেহাই পাই না। আমি আল্লাহর ওয়াস্তে আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি, আপনারা আবু গারিব কারাগারে হামলা করুন। আমাদের সহ সবাইকে ধুলোয় মিশিয়ে দিন । ট্যাংক আর জঙ্গী বিমানকে পরোয়া না করে ছুটে আসুন। আমাদের প্রতি মায়া রাখবেন না । কারণ আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের সহ তাদের মেরে ফেলুন । আমরা আল্লাহর ভয়ে যে সতিত্ব সম্ভ্রম হেফাজত করেছি এ যাবত, তা যখন এ নরপশুদের হাতে খুইয়ে ফেলেছি, তখন আর বেঁচে থাকার কোনো সাধ নেই আমাদের। আমরা যে কুরআনকে গলায় ঝুলিয়ে রাখি, সম্মান করি সীমাহীন, সেই কুরআন তারা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে পায়ের তলায় পিষ্ঠ করে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয় এখানে সেখানে সর্বত্র। প্রিয় ভাইয়েরা! আমি সকলের পক্ষ থেকে আবারও অনুরোধ করে বলছি, তাদের হত্যা করুন। তাদের সমূলে ধ্বংস করুন। বুঝিয়ে দিন ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলার শাস্তি কত কঠিন, কত ভয়াবহ । আপনারা আমাদের জন্য মোটেও চিন্তা করবেন না । আপনাদের হামলায় যদি আমরা মরেও যাই তাতেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। নেই কোনো পরওয়া। কারণ এতেই আমরা শান্তি পাবো। মৃত্যুর মাধ্যমেই আমরা মুক্তি পেতে চাই এই জাহান্নামের ভয়ঙ্কর বিভীষিকা থেকে। ভাইয়েরা সব শেষে আবারো বলছি আমাদের সাহায্য করুন, সাহায্য করুন, মুক্তি দিন এই নরক থেকে । ইতি-

আপনাদেরই এক নির্যাতিত বোন – ফাতিমা।

ফাতিমার চিঠি পাওয়ার পর ইরাকী যোদ্ধাদের অন্তরে আগুন ধরে যায় । উষ্ণ হয়ে উঠে ধমনীর রক্ত। তড়িৎ গতিতে পরিকল্পনা নেয় তারা । তারপর দিনক্ষণ ঠিক করে ১০০ ইরাকী যোদ্ধা আবু গারিব কারাগারে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এতে মার্কিন সৈন্যরা কারা কম্পাউন্ড থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় । ধ্বসে যায় কারাগারের একটি দেয়াল ।

এ খবর মাখফারাত আল ইসলাম, বাগদাদ প্রতিনিধির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। তবে পত্র লেখিকা ফাতিমা এবং তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য মেয়েদের ভাগ্যে কি জুটেছে তা জানা যায় নি ।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post